বোন’ হাসিনাকে এরশাদ দিলেন ঢাকা-১৭

বোন’ হাসিনাকে এরশাদ দিলেন ঢাকা-১৭


শুক্রবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটকে পূর্ণ সমর্থন দিলেও মহাজোটের মনোনয়নের বাইরে দেওয়া দলীয় প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি নিজে ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন।
একই সঙ্গে ১৪৬টি আসনে দেওয়া দলীয় প্রার্থীদের সরে দাঁড়িয়ে মহাজোটের প্রার্থীকে সমর্থন দিতে বলেন। কিন্তু গত রাতে এরশাদ তাঁর এই বক্তব্য প্রত্যাহার করে দলীয় প্রার্থীদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেন।
রাত ৯টার দিকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এরশাদ বলেছেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমার বক্তব্য ভুলভাবে প্রচারিত হচ্ছে জেনে আমি অত্যন্ত মর্মাহত। মহাজোট ব্যতীত জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা মুক্তভাবে নিজ নিজ আসনে লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। কেউ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন না। তাঁদেরকে নির্বাচনের মাঠে থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো। ’
সিঙ্গাপুর থেকে ফেরার পর গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘আমার বোন শেখ হাসিনার জন্য দেশে ফিরেছি। আমি ও আমার দল জাতীয় পার্টি মহাজোটেই আছি। আমরা মহাজোটে নির্বাচন করছি।
সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে ১৭ দিন পর গত বুধবার রাতে দেশে ফেরেন এরশাদ। গতকাল বিকেলে বারিধারার বাসভবন প্রেসিডেন্ট পার্কে সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
মনোনয়ন নিয়ে মহাজোটের সঙ্গে দর-কষাকষির এক পর্যায়ে এরশাদ অসুস্থ হয়ে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি হন। পাঁচ দিন পর তিনি বাসায় ফেরেন। এর মধ্যে দলের মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিব করেন। পরে আবার তিনি সিএমএইচে ভর্তি হন। ৬ ডিসেম্বর হঠাৎ তিনি সিএমএইচ থেকে বনানীতে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে এসে হাজির হন। কার্যালয়ের সামনে গাড়িতে বসেই তিনি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, তাঁর চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। নেতাকর্মীদের তাঁর সঙ্গে থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, তাঁকে দমিয়ে রাখা যাবে না। এরপর ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য তিনি সিঙ্গাপুর যান।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের সময়েও এরশাদ দলীয় প্রার্থীদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। পরে তিনি অসুস্থ হয়ে সিএমএইচে ভর্তি হন। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে ছিল। তাঁর দল সংসদে বিরোধী দলের আসনে বসে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে এরশাদ বলেন, ‘ঢাকা-১৭ আমার খুব প্রিয় আসন। দুপুরে মহাজোটের প্রার্থী নায়ক ফারুক এসেছিলেন, আমি তাঁকে দোয়া করে দিয়েছি, তাঁকে সমর্থন জানিয়ে বলেছি, জাতীয় পাটির নেতাকর্মীরা আপনার জন্য কাজ করবে। ’
ঢাকা-১৭ আসন থেকে সরে যাওয়ায় এবার এরশাদ শুধু একটি আসন (রংপুর-৩) থেকে নির্বাচন করবেন।
উন্মুক্ত যেসব আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের জয়ের সম্ভাবনা আছে সেখানে কী হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, ‘ওই সব আসনে মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। ’
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড সম্পর্কে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টির প্রধান বলেন, ‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। ’
নির্বাচনী সহিংসতা প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, ‘এটা অতীতেও হয়েছে। এটা নতুন কিছু নয়। ’ নির্বাচন কমিশনে ‘বিভক্তির’ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাহবুুব তালুকদার নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে উল্টাপাল্টা বলছেন। ’
নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে এরশাদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্ট। দেশে অবাধ নির্বাচন হওয়ার পরিবেশ আছে। ’
জাতীয় পার্টি মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছে ২৫টি আসনে। দলটি এককভাবে ১৪৬ আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এ ছাড়া জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের আসন সমঝোতার সময়ে ১৩টি আসন উভয় দলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। পরে উন্মুক্ত আসন বেড়ে ১৭টি হয়। ওই ১৭ আসনে নৌকা ও লাঙল প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মনোনয়ন পাওয়া জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হলেন রংপুর-১ মসিউর রহমান রাঙ্গা, রংপুর-৩ এইচ এম এরশাদ, লালমনিরহাট-৩ জি এম কাদের, নীলফামারী-৩ মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, কুড়িগ্রাম-৩ পনিরউদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ-৪ রওশন এরশাদ, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, সিলেট-২ ইয়াহিয়া চৌধুরী, গাইবান্ধা-১ শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ শরীফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ নুরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ নুরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ আলতাফ আলী, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রত্না, পিরোজপুর-৩ রুস্তম আলী ফরাজী, কিশোরগঞ্জ-৩ মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশিদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফেনী-৩ মেজর জেনারেল (অব.) মাসুদউদ্দিন চৌধুরী ও চট্টগ্রাম-৫ আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
মহাজোটের মনোনয়নপ্রাপ্ত ২৫ আসনের মধ্যে দুটি আসনে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীরা নির্বাচন করছেন। এ আসন দুটি হলো নারায়ণগঞ্জ-৩ ও পিরোজপুর-৩। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির লিয়াকত হোসেন খোকার সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কায়সার হাসনাত। পিরোজপুর-৩ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির রুস্তম আলী ফরাজীর সঙ্গে লড়ছেন আওয়ামী লীগের আশরাফ উদ্দিন।
যে ১৭টি আসন উন্মুক্ত রাখা হয়েছে সেগুলো হলো রংপুর-২ আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী (আওয়ামী লীগ) ও আছাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলু (জাপা), কুড়িগ্রাম-৩ এম এ মতিন (আওয়ামী লীগ) ও ডা. আক্কাস আলী (জাপা), কুড়িগ্রাম-৪ জাকির হোসেন (আওয়ামী লীগ) ও মেজর (অব.) আশরাফ উদ দৌলা (জাপা), গাইবান্ধা-৩ ডা. ইউনুস আলী সরকার (আওয়ামী লীগ) ও দিলারা খন্দকার (জাপা), খুলনা-১ পঞ্চানন বিশ্বাস (আওয়ামী লীগ) ও সুনীল শুভ রায় (জাপা), সাতক্ষীরা-১ সৈয়দ দিদার বখত (জাপা) ও মোস্তফা লুত্ফুল্লাহ (ওয়ার্কার্স পার্টি), সাতক্ষীরা-২ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি (আওয়ামী লীগ) ও মতলুব হোসেন লিয়ন (জাপা), সাতক্ষীরা-৪ জগলুল হায়দার (আওয়ামী লীগ) ও আবদুস সাত্তার মোড়ল (জাপা), জামালপুর-৪ ডা. মুরাদ হোসেন (আওয়ামী লীগ) ও মোখলেসুর রহমান (জাপা), শেরপুর-১ আতিকুর রহমান আতিক (আওয়ামী লীগ) ও ইলিয়াসউদ্দিন (জাপা), শেরপুর-৩ এ কে এম ফজলুল হক চান (আওয়ামী লীগ) ও আবু নাসের (জাপা), সিলেট-৫ হাফিজউদ্দিন আহমেদ মজুমদার (আওয়ামী লীগ) ও সেলিম উদ্দিন (জাপা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ এবাদুল করিম বুলবুল (আওয়ামী লীগ) ও কাজী মামুনুর রশিদ (জাপা), কুড়িগ্রাম-৩ মোস্তাফিজুর রহমান (জাপা) ও আসলাম হোসেন সওদাগার (আওয়ামী লীগ), রংপুর-৫ এইচ এন আশিকুর রহমান (আওয়ামী লীগ) ও ফকরউজ্জামান (জাপা), লালমনিরহাট-১ মেজর (অব.) খালেদ আখতার (জাপা) ও মোতাহার হোসেন (আওয়ামী লীগ) এবং নীলফামারী-১ জাফর ইকবাল সিদ্দিকী (জাপা) ও আফতাবউদ্দিন সরকার (আওয়ামী লীগ)। এর মধ্যে কুড়িগ্রাম-৩ আসনে জাপার প্রার্থী ডা. আক্কাস আলী আওয়ামী লীগ প্রার্থী এম এ মতিনকে সমর্থন দিয়ে সরে দাঁড়িয়েছেন।

মন্তব্যসমূহ